সাঈদীর জন্য ‘শহীদ’ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো নুরুল হকের
আল্লামা দেলাওয়ার
হোসাইন সাঈদীর জন্যই ‘শহীদ’ হয়েছেন নুরুল হক! এই যুবক মাওলানা সাঈদীর মুক্তির দাবিতে ‘আল্লামা সাঈদী মুক্তি পরিষদ’-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি জুমার নামাজের পর ডাকা বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কোনো কর্মী নন। এই যুবক কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি ছিলেন সামান্য পান দোকানদার।
আল্লামা সাঈদী মুক্তি
পরিষদের ওই বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধার মুখে সৃষ্ট সংঘর্ষে কক্সবাজার শহরে পুলিশের
গুলিতে চারজন নিহত হন। তাদেরই একজন এই নুরুল হক। ওই দিনের সংঘর্ষে শতাধিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছিলেন। নিকটাত্মীয় ও এলাকাবাসী মনে করেন, নুরুল হক ছিলেন
আল্লামা দেলাওয়ার
হোসাইন সাঈদীর একজন ভক্ত। নিজে কখনও জামায়াতে
ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও তিনি মনে করতেন, ‘সরকার মাওলানা সাঈদীকে অহেতুক হয়রানি করছে, এই হয়রানির প্রতিবাদে প্রয়োজনে আমি শহীদ হতেও প্রস্তুত।’
নিকটাত্মীয়রা
জানান, মৃত্যুর আগে পর্যন্তও নুরুল হক ‘শহীদ’ হওয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা
বলে গেছেন।
নুরুল হক মনে করতেন, শহীদ হলে সরাসরি বেহেশত পাওয়া যাবে।
ছোট ভাই ও ডুলাহাজারা
ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নুরুল করিম জানান, তার ভাই নুরুল হক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি ইসলামপুর বাজারে দোকানে ব্যবসা করতেন। বাবা নুরুল আলম দরিদ্র লবণ চাষী। তারা সবাই ইসলামপুর
ইউনিয়নের ধর্মছড়া গ্রামের বাসিন্দা।
নুরুল করিম
সাংবাদিকদের বলেন, নুরুল হক কখনোই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে
জড়িত ছিলেন না। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও জড়িত নন। তবে ছিলেন সাঈদীর ভক্ত, এমনকি সাঈদীর জন্য
‘কক্সবাজারের প্রথম শহীদ’ হওয়ার আকাঙ্ক্ষাও ছিল তার। বিগত আড়াই বছর ধরেই
বড় ভাই এই আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়ে আসছিলেন। হয়তো আল্লাহ তাই কবুল
করেছেন।
ইসলামপুর ইউনিয়ন
বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাদেক রেজা সাংবাদিকদের জানান, নুরুল হককে কখনোই তিনি জামায়াতের মিছিল-মিটিংয়ে দেখেননি। তবে ২০১০ সালে জামায়াত নেতা সাঈদীকে গ্রেফতারের পর থেকেই নুরুল হক বাজারে ও রাস্তাঘাটে
প্রায়ই লোকজনকে বলে বেড়াতেন, তিনি সাঈদীর জন্য শহীদ
হতে চান!
তিনি বলেন,
‘আমরা তার কথা শুনে হাসতাম। আর পাগল বলে তার কথা উড়িয়ে দিতাম।’
নুরুল হকের
গ্রামের বাড়ি ধর্মছড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় দরিদ্র লবণ চাষী মোহাম্মদ নুরুল আলমের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে নুরুল
হক ছিলেন দ্বিতীয় আর ছেলেদের মধ্যে সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি
ছিলেন একজন সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। ধর্মীয় আচারের প্রতি
ছিল তার অগাধ আস্থা।
স্থানীয়দের
মতে, ছোটবেলা থেকেই নুরুল হক নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। তবে দরিদ্র বাবার বড় ছেলে হিসেবে সংসারে নানা সাহায্য-সহযোগিতা করতে গিয়ে পড়ালেখায়
বেশিদূর এগোতে পারেননি। ১৯৯৬ সালে ঈদগাঁও হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা
দেয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ
নিতে পারেননি। পড়ালেখা ছেড়ে সংসারের ঘানি টানতে চাকরি নিয়েছিলেন
‘ব্র্যাক’ এনজিওতে। ওই এনজিওতে সাত-আট বছর চাকরি করার পর তা ছেড়ে দিয়ে বিগত প্রায় তিন বছর আগে ইসলামপুর
বাজারে মুদি দোকান খুলে বসেছিলেন। কিন্তু তার সরলতায়
দোকানটিও বেশিদিন টেকাতে পারেননি। প্রায় ছয় মাস আগে তিনি
মুহুরী ঘোনা চিংড়ি খামারে চাকরি নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা
যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে স্থানীয় আরও
অনেকের সঙ্গে নুরুল হকও কক্সবাজার শহরে এসেছিলেন ‘আল্লামা সাঈদী মুক্তি পরিষদ’-এর বিক্ষোভ মিছিলে
অংশ নিতে। পুলিশের ধরপাকড় এড়িয়ে নুরুল হক শহরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। শহরের সবুজবাগ জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে বের হওয়ার পথেই খুব কাছ থেকে পুলিশের
গুলিতে নুরুল হক শহীদ হন।
নিহত নুরুল
হকের লাশ পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি গ্রামের বাড়িতে নেয়া হলে সেখানে হাজার হাজার মানুষের
ঢল নামে। জানাজার নামাজেও তাকে ‘শহীদ’ বলে আখ্যায়িত করা হয় বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
ইসলামপুর ইউনিয়ন
পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার আবদুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, এলাকাবাসী মনে করেন, আল্লাহ নুরুল হকের
শহীদ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
তিনি জানান,
এলাকাবাসী নুরুল হকের বাড়ির সামনের রাস্তাটি ‘শহীদ নুরুল হক সড়ক’ নামকরণ করে
সেখানে ব্যানার টানিয়ে দিয়েছেন।
পারিবারিক সূত্র
জানায়, নুরুল হক প্রায় ৯ বছর আগে বিয়ে করেন। তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। ছেলে মোহাম্মদ শাহীন
(৮) স্থানীয় নুরানী আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র এবং মেয়ে নুশরাত মনি
(৫) শিশু শ্রেণীর ছাত্রী।
নুরুল হক শহীদ
হওয়ার পর দু’জন প্রবাসী সাঈদী সমর্থক তার সন্তানদের পড়ালেখা
ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার ছোট ভাই নুরুল করিম।
সূত্র: দৈনিক আমার দেশ
0 টি মন্তব্য:
Post a Comment