শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্যের প্রতিবাদ করলেন আল্লামা আশরাফ আলী

চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসাকে জঙ্গিবাদের আস্তানা বলেছেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি ও ইসলামী জঙ্গীবাদ বিরোধি চলচ্চিত্রকার শাহরিয়ার কবির।তিনি বলেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা জঙ্গিদের জন্ম দেয়। তাই এটি একটি জঙ্গিবাদের আস্তানা। এই মাদ্রাসা জামায়াতের অর্থে পরিচালিত হয়। আর এসব জঙ্গিদের মদদ দেন জামায়াতি ও হেফাজতে ইসলামী নামধারীরা।

তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদে  দেয়া বিবৃতিতে দেশে রাজনৈতিক ভাবে সাম্প্রাদায়িকতাকে উস্কে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাক-এর সহ সভাপতি, কুমিল্লার কাসেমুল উলুম মাদরাসার শাইখুল হাদিস, আল্লামা আশরাফ আলী।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আশিকানে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জঙ্গিবাদ, হত্যা, লুটতরাজ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড, ইসলাম সম্মত নয়- ওলি-আওলিয়া প্রচারিত ইসলামই প্রকৃত মানবতা ও মুক্তির পথ’ বিষয়ক শীর্ষক’ সেমিনারের শাহরিয়ার কবির হাটহাজারী মাদ্রাসা নিয়ে মন্তব্য করেন।  তিনি আরো বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, বিভিন্ন সময়ে বোমা মেরে দেশের বুদ্ধীজীবী, সুশীল সমাজের লোকদের হত্যা করেছন এসব জঙ্গিরা। সর্বশেষ তারা হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজারেও বোমা হামলা চালিয়েছে।

ঘাদানিকের এই নেতা বলেন, হেফাজতে ইসলামের আহবায়ক মাওলানা শাহ আহমদ শফীকে আদালতে এসে আমার নাস্তিকতা প্রমাণ করতে হবে।  মাওলানা শফী কে তা আমার জানা আছে। সে জামায়াতে ইসলামীর লোক। হেফাজতে ইসলামের নামে যারা আন্দোলন চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে পাঁচজন আলেম আছেন জামায়াতে ইসলামীর।

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের পেছনে জামায়াতের অনেক নেতা রয়েছেন। যারা পেছন থেকে তাদের স্বার্থে হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করছে।

শাহরিয়ার কবির বলেন, বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের ইসলামকে রক্ষা করতে হলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আর তাদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়। তিনি বলেন, শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে যে সব তরুণ আন্দোলন করছেন, তারা সকলেই আওলিয়াদের ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান। জামায়াতের মাত্র ৩/৪ শতাংশ ভোট বাদ দিলে বাকি সব ভোট দেশের ওলি-আওলিয়াদের।

রবিবার তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদে আলামা আশরাফ আলী বলেন, মধ্যযুগীয় বর্ববরদের মতো গোত্রে, বর্ণে, ধর্মে দাঙ্গা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে দেশে। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা ব্যবহার করে পরস্পরকে গালমন্দের এই অপসংস্কৃতি বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিষিয়ে তুলছে। তিনি রাজনীতিতে অহেতুক ধর্মের জিকির বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, নাস্তিক, মুরতাদদের প্রতিহত করতে বাংলার তৌহিদী জনতা সর্বদাই সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে। তিনি মহানবী স. কে অবমাননার শাস্তিবিষয়ক আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে সরকারকে বলেন, নাস্তিকদের লালন-পালন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না। অচিরেই চিহ্নিত নবী অবামাননাকারীদের গ্রেফতার ও নাস্তিকদের অপকর্ম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশপ্রীতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, অতীত স্বাী ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা পরাজিত হয়েছে। সরকারও যদি ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে অতীতের চেয়ে ভয়াবহ পরিণাম হবে তাদের।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ভয়েস অব আমেরিকার এক আলাপনে শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশের জঙ্গী মোকাবেলায় আমেরিকার সাহায্য চান। সেখানে তার চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। তিনি জঙ্গীবাদের উপর তিনটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছের। প্রথম ছবিটির নাম দ্য পোট্রেইট অফ জিহাদ , যেখানে বাংলাদেশের ভেতরে উগ্র ইসলামপন্থিদের কার্যকলাপ দেখানো হয়েছে । আর তার দ্বিতীয় ছবিটির নাম জিহাদ উইথাউট বর্ডার , যেখানে তিনি মূলত আলোকপাত করেছেন পাকিস্তানে ধর্মীয় মৌলবাদিদের  জঙ্গি রূপ সম্পর্কে। সেই সাক্ষাৎকারে  তিনি বলেন , ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং ইসলামে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই কিন্তু জঙ্গিরা ইসলামকে কলুষিত করছে।তিনি বলেন যে সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আই যতদিন পর্যন্ত জিহাদ রপ্তানি করবে , ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে একা সেটা মোকাবিলা করা কঠিন হবে । তিনি মনে করেন এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র মূখ্য ভূমিকা রাখতে পারে । তাই আমেরিকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ , সেটি পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে।

সূত্র: http://banglargangai.wordpress.com